তুমি এসেছ বলেই হে রুদ্র বৈশাখ,
হে প্রলয় নটরাজ, স্বস্তি নামে ধরাতলে ।
চিতাগ্নি হতে প্রবল খান্ডবদাহন নিয়ে ;
চৈত্রদেবীর নিদারুণ অনাচার, তুমি করো রোধ-
তোমার প্রাবল্যে সে করে পৃষ্ঠপ্রদর্শন ।
বিগত বৎসর হতে বর্ষপঞ্জি নূতন পাতায়
নেয় আশ্রয়, পূর্ণ হয় নতুনের আগমনে ।
শোনা যায় নতুনেরে বরণের গান “ এসো এসো
হে নবীন অগ্নিঝরা বৈশাখ "।
অগ্নিবানে ভস্ম হয়ে যাওয়া উসর পৃথিবী
ফিরে পায় শ্বাস, জড় দেহে তার প্রাণপ্রতিষ্ঠা
তোমারি হাত ধরে হে বৈশাখ ।
কলরোল ভুলে যাওয়া, তরুণ প্রভঞ্জন
আবারো নাচে মত্ত্ব দোলায়, গায় উড়িয়ে নেবার গান ।
মর্ত্যলোকের দশদিকে মাতম ওঠে প্রলয় বায়ুর !
ঈশান কোন হতে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ নেমে আসে-
অন্ধ বেগে, আনে কালবোশেখীর ধারা।
অঝোর বর্ষণে ধুয়ে মুছে যায় লেগে থাকা
পঙ্কিলতা যত ধরণীর । দেখে তাই নবীন প্রাণে
জাগে উচ্ছাস, রক্তধারায় প্রলয় খেলা
খেলে বৈশাখ । তাই শহরে নগরে, গ্রামাঞ্চলে
কানাগলি রাজপথে, চলে লাল শাদা আর হালখাতার উৎসব ।
শুধু তোমারি জন্যে হে বৈশাখ
আমাদের ভোলাদিনের স্মৃতিগুলো,
একে একে নাড়া দেয় হৃদয়ে ।
তাই পাঞ্জাবি, ধুতি আর শাড়ি আবার শোভা পায়-
প্রৌঢ়, যুবা, শিশু রমণী সবার অঙ্গে ।
নতুন সাজে সবার ক্লান্তিহীন আনন্দ ভ্রমণ
মুখে সবার একটাই বাণী, শুভ নববর্ষ ।
বিশ্বায়নের এই তীব্র ভীষণ টানাপোড়েনের দিনে,
নাগরিক ক্লান্তিতে, ফিরে আসে আবার পুরোনো
আচার প্রথা । এই একদিনে আমরা ফিরে যাই
শত বছরের লালিত বাঙালি সংস্কৃতি দ্বারে ।
সমস্ত দিনের হাড়ভাঙা খাটুনি, হালের বলদের পিছে
দাড়িয়ে বশে আনা, অবাধ্য শক্ত জমিন । বীজ বোনা
ফলানো সোনার মতন মুঠি মুঠি ধান ।
ঘরে ফিরে মরিচপোড়া, লবন যোগে মাটির সানকিতে
বাসি পান্তার অমৃত ভোজন, আমরা এখনো অনুভব করি
নগরের মাঠে ময়দানে, তুমি এসেছো বলে হে বৈশাখ ।
সবাইকে পহেলা বৈশাখের নিরন্তর শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ